"পেটের দায়ে আবারও চোর-ডাকাত হবো", মিশুক বন্ধের প্রতিবাদে ডিসিকে চালকদের হুমকি



/পৌরসভায় মিশুক বন্ধের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ চালকরা, বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি
/প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান, জীবিকা হারানোর শঙ্কায় পরিবার 

কক্সবাজার অফিসঃ

"আমরা আবার চোর ডাকাত হয়ে যাবো, আমরা ছিনতাই করবো। আমরা পেটের জন্য খুন-খারাবিও করবো।" কক্সবাজারে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (মিশুক) চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রবিবার (২৭ এপ্রিল) শহরের পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে মানববন্ধন করেন চালক ও মালিকরা। সেখানে বেশ কয়েকজন চালক ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়ে এক চালক বলেন, কক্সবাজার শহরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানীয় চালকদের জন্য সৎ পথে উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। অন্যথায় পেটের দায়ে তারা আবারও চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হবেন। তিনি আরও বলেন, "আমরা এখন কষ্ট করতেছি এটা ডিসি সাহেবের ভালো লাগতেছে না। ডিসি সাহেব যদি আমাদের চোর-ডাকাত বানাতে না চায় তাহলে আজকেই রায় দিতে হবে।"
মিশুক গাড়ির বৈধতার দাবি জানিয়ে আরেক চালক বলেন, ইয়াবা ট্যাবলেট যেমন অবৈধ, তাদের গাড়িও তেমন অবৈধ। প্রতিনিয়ত পুলিশ ও সাধারণ মানুষের হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা এবং কোথাও কোনো আইনি স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। তিনি আরও অভিযোগ করেন, রামু, ঈদগাহ ও মরিচ্চা থেকে এসে অনেকে শহরে গাড়ি চালাচ্ছে এবং তাদের দুর্ঘটনার দায়ভার স্থানীয় পৌরসভা এলাকার চালকদের ওপর পড়ছে। তাই তারা শুধু পৌরসভার চালকদের জন্য একটি বৈধতা চান।
শোরুমে বিক্রির অনুমতি দিয়ে রাস্তায় গাড়ি বন্ধ করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এক চালক। তিনি বলেন, "যেসব শো-রুমে মিশুক গাড়ি প্রস্তুত করা হয় আপনারা সেগুলো বন্ধ করেন। আমাদের পেটে কেনো লাথি মারছেন? আমাদেরকে আলোর পথ দেখিয়ে আবার অন্ধকারে ঠেলে দিবেন না। ব্যবস্থা নিতে হলে প্রস্তুতকারকদের উপর নিন, নিরীহ চালকদের উপর নয়।"
আরেক চালক টমটম ও মিশুক উভয় গাড়ি বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, মিশুক যেমন অবৈধ, টমটমও অবৈধ। বন্ধ করলে দুটোকেই একসাথে বন্ধ করতে হবে। একজন চালক জানান, তিনি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এবং মিশুক বন্ধ হলে তার বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও সন্তানেরা অনাহারে মারা যাবে। তাই তিনি প্রশাসনের কাছে মিশুক গাড়ির বৈধতার জন্য আকুল আবেদন জানান।

কক্সবাজারের হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান পলাশ লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারিচালিত রিকশামুক্ত একটি শহর চান। তিনি বেয়াদব, উদ্ধত ও বেপরোয়া ব্যাটারি রিকশাচালকদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। যারা এদের উস্কানি দিচ্ছে এবং নেতৃত্ব ফলাচ্ছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করারও দাবি জানান তিনি। প্রয়োজনে এই সমস্যার সমাধানে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কথা উল্লেখ করে মঈনুল হাসান পলাশ রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তার অধিকার বলে জোরালো মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসন আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে কক্সবাজার পৌরসভায় ব্যাটারিচালিত মিনি টমটম বা মিশুক গাড়ি অবৈধ ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রবিবার সকালে মানববন্ধন ও প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন কক্সবাজার পৌরসভার মিশুক চালকরা। তাদের এই ক্ষোভপূর্ণ প্রতিক্রিয়া এবং হুমকির ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ