![]() |
ছবি ক্যাপশন: মহেশখালীতে গুলিবিদ্ধ মাছ ব্যবসায়ী আবু। |
"আমার পিতা বিএনপির কর্মী, নিরীহ মাছ ব্যবসায়ী, কোস্টগার্ডের সাথে থাকা প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা গেছেন" - নিহত আবুর পুত্র
- স্থলে নাটকীয় অভিযান বন্ধ কবে হবে?
- শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর বীর নিবাসে হামলার চেষ্টা
- এলোপাতাড়ি গুলির শব্দে স্থানীয়দের উদ্বেগ
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ
কক্সবাজারের মহেশখালীতে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের নামে কোস্টগার্ডের অভিযানে এক নিরীহ মাছ ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। নিহত আবু (৪৮) কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামের মৃত আলী হোসাইনের পুত্র এবং স্থানীয়ভাবে বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচিত।
নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে কোস্টগার্ডের অভিযানে তাদের বাড়িতে হানা দেয় এবং কোস্টগার্ডের সাথে থাকা স্থানীয় প্রতিপক্ষের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গুলিতে আবু নিহত হন।
নিহত আবুর বড় ছেলে মোহাম্মদ সুমন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, "আমার বাবা একজন নিরীহ মানুষ ছিলেন এবং মাছ ব্যবসার মাধ্যমেই আমাদের সংসার চলতো। মধ্যরাতে কোস্টগার্ড আকস্মিকভাবে আমাদের ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে কিছু দূরে নিয়ে যায় এবং বেদম মারধর করে। ঠিক সেই মুহূর্তে পেছন থেকে হোসেন বহাদ্দারের ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা আমার পিতাকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।"
নিহতের স্ত্রী রাজিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, কোস্টগার্ড সদস্যরা তথাকথিত 'সোর্স' হিসেবে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে তার স্বামীকে উঠানে বের করে আনে এবং সন্ত্রাসীরা গুলি করে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এবং কোস্টগার্ডের এ ধরনের "নাটকীয়" অভিযান বন্ধের জোর দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, তারা প্রকৃত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের পক্ষে, তবে নিরীহ মানুষের বাড়িতে এ ধরনের অভিযান বন্ধ হওয়া উচিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লবণ চাষের জমি নিয়ে স্থানীয় প্রতিপক্ষ হোসেন বাহদ্দারের সাথে নিহত আবুদের দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। অভিযোগ উঠেছে, এই বিরোধের জেরেই প্রতিপক্ষ কোস্টগার্ডকে ভুল তথ্য দিয়ে অভিযানের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
মহেশখালীর স্থানীয় সাংবাদিক এস এম রুবেল এই ঘটনায় একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানতে চান, পুলিশ ও নৌবাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও কেন কোস্টগার্ড স্থলভাগে অভিযান পরিচালনা করলো এবং কিভাবে তারা একজন নিরীহ কৃষককে গুলি করে হত্যার দায় এড়াতে পারে। রুবেল প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্র এবং কোস্টগার্ডের কাছে এই ঘটনার জবাবদিহিতা কে চাইবে এবং কে তা নিশ্চিত করবে। তিনি কোস্টগার্ডের এই তথাকথিত অভিযানে নিরীহ কৃষকের প্রাণহানির ঘটনায় ছাত্র ও সাধারণ জনগণকে তাদের ভূমিকা বিবেচনা করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চট্টগ্রামে নিহত মহেশখালীর প্রথম শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর বড় ভাই মিজানুর রহমান মাতাব্বার অভিযোগ করেন, কোস্টগার্ড সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ বিএনপির পরিবারকে "নিধন" করার মিশনে নেমেছে এবং এলাকার শান্ত পরিবেশ বিনষ্ট করছে। তিনি আরও জানান, কোস্টগার্ড সদস্যরা শহীদ তানভীর ছিদ্দিকীর বীর নিবাসে হামলার চেষ্টাও চালিয়েছে। তিনি এলাকার সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, মহেশখালীর দ্বীপে কোস্টগার্ডের একের পর এক স্থল অভিযান অস্ত্রের মহড়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যা এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। গত ২০ মার্চ হাফপ্যান্ট পরিহিত অবস্থায় চারজনসহ কয়েকজন ব্যক্তির অত্যাধুনিক অস্ত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় স্থানীয়রা আরও বেশি উদ্বিগ্ন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই মহড়ায় ২০ থেকে ২৫ জন অংশ নিয়েছিল।
মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইছার হামিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কালারমারছড়ায় একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং এই ঘটনায় কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ