সৈকতের নিরাপত্তায় শক্ত অবস্থান; আবারও পর্যটনমূখর হচ্ছে কক্সবাজার

 



■ কক্সবাজার রিজিয়ন ট্যুরিস্ট পুলিশ

■ ফেব্রুয়ারিতে হারিয়ে যাওয়া ২০ শিশু উদ্ধার

■ ছিনতাইকারীসহ অন্তত ২৫ জন আটক

 ■ তারাবির সময় বিশেষ টহল

■ভাড়ায় লকার সিস্টেম ও মোটরসাইকেল পেয়ে খুশি অনেকে


কক্সবাজারকে নিরাপদ পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা মাথায় রেখে চোর, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীকে ধরতে কঠোর অভিযান চালাচ্ছে এই পুলিশ। পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে এসে হারিয়ে যাওয়া শিশুদের উদ্ধারেও ভূমিকা রাখছে তারা। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে হারিয়ে যাওয়া ২০ শিশুকে উদ্ধার করে অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।



এ ছাড়া রাশিয়ান পর্যটক মিস মনিকা কবিরসহ অনেক পর্যটকের মোবাইল, মানিব্যাগসহ হারানো গুরুত্বপূর্ণ মালামাল উদ্ধার করে বুঝিয়ে দেয় ট্যুরিস্ট পুলিশ। একই সময় অন্তত ২৫ ছিনতাইকারী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিকে আটক করে আইনের আওতায় এনেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ২৪ ঘণ্টায় তারা পর্যটকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে। সমুদ্রসৈকতের সব পয়েন্ট ও স্পটগুলোর নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রায় ১৫০ জন সদস্য কাজ করছেন।




গত শনি ও রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত শহর ও সমুদ্রপারের বিভিন্ন পয়েন্ট ও ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তারাবি নামাজের সময় শহরের কয়েকটি রাস্তা অনেকটা নীরব হয়ে যায়, সেখানে ছিনতাইকারীদের হাত থেকে জনসাধারণকে নিরাপত্তা দিতে বিশেষ টহল দিচ্ছে পুলিশ। এ ছাড়া গত মাসে অন্তত ২৫ জনকে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ছুরি ও চাকু উদ্ধার করা হয়।


বীচ থেকে হিজড়াতের উৎখাত,  প্রশংসায় ট্যুরিস্ট পুলিশঃ

কক্সবাজারের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী সহ বিভিন্ন পয়েন্টে হিজড়াতদের আনাগোনাতে দীর্ঘদিন ধরে বিরক্ত ও হয়রানীর শিকার দেশী ও বিদেশি পর্যটকেরা।  ট্যুরিস্ট পুলিশ এর উদ্যোগে তাদেরকে বীচে নামা সহ পর্যটকদের নানা হয়রানীর অভিযোগে আটক করলে হিজড়াদের উৎখাত কমে যায়।  হিজড়াদের কারণে অনেক পর্যটক হয়রানির শিকার হওয়া একাধিক পর্যটক জানান, সন্ধ্যা হওয়ার সাথে বিভিন্ন পয়েন্টে চাদাঁবাজদের মতো একেকটি টিমে ভাগ হয়ে হিজড়ারা জোরপূর্বক টাকা সহ বিভিন্ন জিনিস চাই।  অনেকেই না দিতে চাইলে নেচে বা উলঙ্গ হয়ে বা বিভিন্নভাবে হয়রানিমূলক জিম্মি করে তারা। 

ট্যুরিস্ট পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত আগত পর্যটকেরা। তারা চান হিজড়ারা যেন পর্যটকদের হয়রানি না করে সেটি নিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা করুক এমনটাই চাই সকলে৷ 



ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য কক্সবাজারে আসেন। ভ্রমণে আসা এই পর্যটকদের যেন কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হতে হয়, সে জন্য যা যা করা প্রয়োজন নিয়ম-বিধি মেনে আমরা তাই করছি। ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এখানে ঘুরতে আসা বিভিন্ন বয়সী পর্যটকরা।’

নিরাপত্তার জন্য যা করা হয় : পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ সার্বিকভাবে কক্সবাজার পর্যটনশিল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বরতরা।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাসমান মাদক ব্যবসায়ী, হিজড়াদের  উৎপাত, দালালচক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার, ক্যামেরাম্যান, বিচ-বাইকারদের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।


এ ছাড়া ম্যাসাজবয়দের বের করে দেওয়া হয়েছে। হকারদের একটা ডিসিপ্লিনের মধ্যে আনা হচ্ছে এবং টমটমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘নিরাপত্তা মাথায় রেখে ২৭টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে ও এলইডি মনিটর লাগানো হচ্ছে। ড্রোন ক্যামেরা স্থাপনসহ ওয়াটার রেসকিউ টিম করা হয়েছে। নারী স্কোয়াড টিম নামানো হয়েছে। বায়নোকুলার টিম নামানো হয়েছে। মোট কথা, এই শহরে ভ্রমণে আসা মানুষদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে চাই। এ জন্য জেলাবাসীর সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা চাই।’



ভাড়ায় লকার বক্স ও মোটরসাইকেল : কয়েক বছর আগেও সমুদ্রে গেলে সমুদ্রপারে ভাড়ায় লকার সিস্টেম ও মোটরসাইকেল পাওয়া যেত না। গত তিন থেকে চার বছর ধরে ভাড়ায় লকার পেয়ে অনেকে খুশি। ঘণ্টায় ৪০ টাকা। অন্যদিকে ঘণ্টা, এমনকি দিন হিসেবে চালানোর জন্য ভাড়ায় মোটরসাইকেল  মিলছে কক্সবাজারে।

শাহীন নামের একজন জানান, প্রথম ঘণ্টায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেন তাঁরা। এরপর থেকে একবার একে ভাড়া নেন। তবে পর্যটক কম-বেশির ওপর ভাড়া নির্ভর করে বলে জানান শাহীন। তেল খরচ বাহকের নিজের এবং মালিকরা জিপিএস ট্র্যাকার দিয়ে লোকেশন দেখে থাকেন। এ জন্য বাইক চুরি হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে জানান তাঁরা। এ ছাড়া আগে ভাড়া ঠিক করে নেওয়া হলে পরে উঠকো ঝামেলা পোহাতে হয় না বলে জানান তাঁরা।



এর আগের দিন শনিবার দুপুরে বিচপারের লকার বক্সে মোবাইল ও পার্টস রেখে যাওয়ার সময় এক দম্পতি বলেন, ‘গত ছয় বছর আগে একবার আসছি, তখন খুবই ঝামেলায় পড়েছিলাম লকার না থাকায়, তাই এবার এগুলো পেয়ে খুবইখুশি আমরা।’


ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ আপেল মাহমুদ জানান, 'কক্সবাজারের পর্যটন জোনে বেশ কিছুদিন ধরে যেসব ছিনতাইকারীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলো, তাদের গ্রেফতার করতে সবকটি সিসিটিভি ক্যামেরা মেরামত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে। পর্যটন জোনে যেসব ছিনতাইকারীরা পর্যটকদের টার্গেট করে ছিনতাই করে, তারা যেখানেই থাকুক না কেন। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ছিনতাইকারীমুক্ত কক্সবাজার পর্যটন নগরী গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।'


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ