"নাম ইউএনও, ছবি এসিল্যান্ডের: ফেসবুকে ভয়ানক প্রতারণা"

ইউএনও'র নামে ফেসবুক আইডি, এসিল্যান্ডের ছবি: অভিনব প্রতারণার ফাঁদ


এরফান হোছাইনঃ

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাতের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতারক চক্রটি ইউএনও'র নাম ব্যবহার করে এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত ফারাবীর ছবি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

প্রতারণার কৌশল ও কার্যক্রম:

গত ১ মার্চ ইউএনও মাসুমা জান্নাত তার নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি দেখতে পান। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত ফারাবীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ভুয়া আইডি থেকে কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের নামে বিভিন্ন কার্যক্রম প্রচার করা হচ্ছে, যা আসলে নিশাত ফারাবীর ভ্রাম্যমাণ আদালতের ছবি। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে আর্থিক লেনদেনের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে।

অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ:

অভিযোগে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি ইতোমধ্যে ৮,৬০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি বিকাশ এজেন্ট নম্বর থেকে ০১৬২০-৩০৬১৩৪ নম্বরে টাকা পাঠানো হয়। স্ক্রিনশট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এয়ারটেল সিম ব্যবহারকারী একটি নম্বরে টাকা ক্যাশ-ইন হয়েছে, যা ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন করা হয়েছে।

প্রতারকের পরিচয় ও অবস্থান:

অনুসন্ধানে জানা যায়, ০১৬২০-৩০৬১৩৪ নম্বরটি ‘আইকন’ অ্যাপে ‘ম্যাজিস্ট্রেট আপু’ নামে নিবন্ধিত। মোবাইল কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, সিমটি এরশাদ নামে নিবন্ধিত, যার জন্ম তারিখ ২ মার্চ ২০০২ এবং ঠিকানা কক্সবাজারের ঈদগাঁহ। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম এরশাদুর রহমান, বাড়ি রামু উপজেলার রশীদ নগর ইউনিয়নে। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ জসিম উদ্দিন জানান, এরশাদুর রহমান তাদের এলাকার বাসিন্দা।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নম্বরটি ২ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত ১৮ বার ব্যবহার করা হয়েছে, তবে কোনো কল করা হয়নি। শুধু এসএমএস-এর মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে। এই সময়ে প্রতারকের অবস্থান ছিল কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রামে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ:

কর্ণফুলী থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. মিজানুর রহমান জানান, ইউএনও'র জিডিটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে এবং শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। পুলিশের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ইন্সপেক্টর মো. আফতাব হোসেন জানান, এ ধরনের প্রতারক চক্র অন্য জেলার নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করে অপরাধ করে। তিনি ভুক্তভোগীদের সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে সিমটি আনরেজিস্টার করার পরামর্শ দেন।

বিকাশ কাস্টমার কেয়ারের এক্সিকিউটিভ অফিসার তানিয়া আহমেদ জানান, প্রতারণা এড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছে বিকাশ।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত ফারাবী জানান, তিনি প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরেই থানায় জিডি করেছেন।


এই ঘটনায় ইউএনও মাসুমা জান্নাত ও এসিল্যান্ড নিশাত ফারাবী উভয়েই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানে প্রতারকদের অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ