নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীদের যেভাবে ছাত্রদল পুনর্বাসন করছে, রামেকে তোলপাড়

 

ছাত্রলীগ কর্মী এখন ছাত্রদল সভাপতি, রামেকের রাজনীতিতে তোলপাড়


ছাত্রলীগ কর্মী এখন ছাত্রদল সভাপতি, রামেকের রাজনীতিতে তোলপাড়

রাজশাহী: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত নুর ইসলামকে রামেক ছাত্রদলের সভাপতি করায় দলের ভেতরেই দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ। শুধু তাই নয়, নুর ইসলামের ছাত্রত্ব না থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত নুর ইসলামকে সভাপতি করায় রামেকের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

গত রবিবার (২৪ মার্চ) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের স্বাক্ষরে রামেক ছাত্রদলের ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সভাপতি করা হয় নুরের নাম। এরপরেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নুরের অংশগ্রহণের ছবি। ছবিতে দেখা যায়, ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আনিকা ফারিহা জামান অর্ণাকে ফুল দিচ্ছেন নুর। এমনকি বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন, শোক দিবসে খাবার বিতরণ, মিছিলে অংশগ্রহণ, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের কবর জিয়ারতের মতো কর্মসূচিতেও তার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের নেতার সঙ্গে কেক কাটার ছবিও ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগে নুরের কোনো পদ না থাকলেও তিনি কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রামেক ছাত্রাবাসে থাকাকালীন তাকে ছাত্রলীগের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ হিসেবে ধরা হতো। রামেক ছাত্রদলের কমিটিতে নুরের নাম আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনের নেতারা। তাদের দাবি, নুরের মতো ছাত্রলীগ কর্মীকে সভাপতি করায় তারা হতাশ। এমনকি, ড্যাবের স্থানীয় নেতারাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ এক নেতা বলেন, ‘নুর নুরুন্নবী হল ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন। তিনি ওই হলের সভাপতি প্রার্থীও ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কমিটি না হওয়ায় পদ পাননি। তার মতো একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে সভাপতি করায় আমরা হতাশ হয়েছি। ড্যাবের স্থানীয় নেতারাও আমাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। আমরা যতদূর জানি, সবশেষ সিটি নির্বাচনে নুর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের স্বাস্থ্যসেবা উপকমিটির সদস্য ছিলেন। তাকে কীভাবে ছাত্রদল সভাপতি করা হলো সেটিই বুঝতে পারছি না।’

তবে রামেক ছাত্রদলের সভাপতি নুর ইসলাম তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থায় জোর করে ছাত্রলীগের কিছু প্রোগ্রামে আমাকে নেওয়া হয়েছিল। আমি কোনোদিনই ছাত্রলীগ করতাম না। আমি জুলাই আন্দোলনে রামেক থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। দলকে সুসংগঠিত করেছি। তাই কেন্দ্র আমাকে রামেক ছাত্রদলের সভাপতি করেছে।’

এই ঘটনায় রামেকের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। ছাত্রদলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ এবং নুরের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, এই কমিটি রামেকের ছাত্র রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ