বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশংকা

 



বিগত কয়েক বছরের ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিসংখ্যানে রাজধানী ঢাকার পর পর্যটন নগরী কক্সবাজারের অবস্থান। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারে ডেঙ্গু পরিস্তিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশংকা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগেভাগেই সরকারী-বেসরকারী সমন্বতি উদ্যোগ গ্রহন করা জরুরি।

বৃহষ্পতিবার  বিকেলে কক্সবাজারের একটি হোটেলে 'ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়' বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এসব বক্তব্য উঠে আসে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, 'ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং পৌর কর্তৃপক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলা, ঘরের আশেপাশে পরিষ্কার রাখা, নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মশক নিধন কার্যক্রম এবং রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা, ব্যক্তিগত সতর্কতা অবলম্বন করে ডেঙ্গু বিস্তার রোধ করা সম্ভব।'



মাল্টি-পার্টি এডভোকেসি ফোরাম, কক্সবাজার এর সাধারণ সম্পাদক, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক,সিনিয়র রাজনৈতিক ফেলো (ডিআই) ইউসুফ বদরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন, 'দেশের অন্যতম ডেঙ্গু হটজোন কক্সবাজার, ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগের প্রাদুরভাবের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।

২২৮.২৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কক্সবাজার সদর উপজেলার জনসংখ্যা ৫ লক্ষেরও অধিক, যেখানে জন ঘনত্ব বিবেচনায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২,২৮৯ জনের বেশি মানুষের বসবাস। অতি জন ঘনত্ব, পর্যটন ও প্রশাসনিক কেন্দ্র বিবেচনায় কক্সবাজার সদর ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগের বিস্তারের আদর্শ স্থান।


গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হরে বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা স্থানীয় জনগণ এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল।'

স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে সভায় আরও জানানো হয়, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো অসচেতনতা। ঝোপঝাড, বাড়ির আঙিনা, ড্রেন এবং যেখানে ময়লা ও পানি জমে থাকে, সেসব স্থান নিয়মিত পরিষ্কার না রাখার ফলে এডিস মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। এছাড়া, মশারি ব্যবহার না করাও ডেঙ্গু বিস্তারের একটি কারণ। নগরীর পাহাড়তলী, আদর্শগ্রাম, কলাতলী, লারপাড়া, ঘোনাপাড়া, বৈদ্যঘোনাসহ বিভিন্ন পাহাড়ি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ডেঙ্গু অন্যতম হটস্পট হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেকোনো ধরনের পণ্যসামগ্রীর প্যাকেট ও ড্রাম জাতীয় দ্রব্যে বৃষ্টির পানি জমলে সেখান থেকে এডিশ মশার প্রজনন হয়। এছাড়া সংস্কার কাজ করার সময় খনন করা গর্তসহ নালা-নর্দমার পানিতে ডিম পাড়ে ডেঙ্গুবাহী এডিশ মশা। এছাড়া কক্সবাজার পর্যটন এলাকা হওয়ায় ভ্রমণে আসা অনেক পর্যটক আবাসিক হোটেলে মশারি ব্যবহার না করায় ঝুঁকি বাড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি কক্সবাজারে এসে রাতযাপন করলে তাকে মশা কামড়ানোর পর অন্য ব্যক্তির মাঝে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়। ঠিক এভাবে ডেঙ্গু সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।


সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক সদরুল আমিন, কক্সবাজার সদরের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর জহরলাল পাল, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

সভায় জানানো হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি হতে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত কক্সবাজার এ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৭ জন মৃত্যুবরন করেছে, যার সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশংকা আছে। সেই সাথে ব্যাপক ডেঙ্গু রোগী ও অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারনে জনভোগান্তি চরম আকার ধারন করেছিল। পোস্ট ডেঙ্গু'র নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ নানা শারিরিক জটিলতা নিয়ে জীবন যাপন করছেন। তাই আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজারে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন থেকেই কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন। জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তু রাখা, চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষার পর্যাপ্ত আরডিটি কিট সরবরাহ করা দরকার। এছাড়াও যেহেতু রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও রোগীর চাপ জেলা সদরে ধাবিত হয়, তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে জেলা প্রাশাসন সহযোগীতায় অন্যান্য উপজেলার স্বাস্থ্যকর্মী, ভলান্টিয়ার, রোহিঙ্গা মাঝিসহ নানাভাবে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো দরকার। মতবিনিময় সভায় সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান,এনজিও,ইয়ুথ, সাংবাদিক, নারী সংগঠক,পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ