চট্টগ্রাম অফিসঃ
ইয়াবা পাচার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি জাহাঙ্গীর আলমসহ সাত পুলিশ সদস্যকে স্থগিত করা হয়েছে। জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে একই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সুপার (এসপি) রহমত উল্লাহকেও সদর দপ্তরে প্রত্যাহার করা হয়।
### **স্থগিত কর্মকর্তাদের তালিকা ও চলমান তদন্ত**
স্থগিতদের মধ্যে রয়েছেন সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) সমীন গুহ, কনস্টেবল জাহিদুল ইসলাম রানা, সাইফুল হাসান, মো. রেজাউল করিম খান, মোহাম্মদ ইরফান ও ড্রাইভার রিয়াজ উদ্দিন। অভ্যন্তরীণ তদন্তের অংশ হিসেবে এদের সবাইকে পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়েছে।
### **সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে উন্মোচিত কেলেঙ্কারি**
জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এই তদন্তের গতি বাড়ায়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি *"এসপির ইয়াবা কারবার: আড়ালে বিক্রি ৩ লাখ ৫০ হাজার পিস"* শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ৬ জানুয়ারি রামুর কচ্ছপিয়া এলাকায় ডিবির একটি অভিযানে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার জব্দ করা হয়। তবে অভিযুক্ত তিন ইয়াবা কারবারিকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা (বাজারমূল্য ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা) আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে।
### **দুর্নীতির জালে জড়িত পুলিশ**
সূত্রমতে, এসপির অনুমোদনে ডিবি ২ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পিসপ্রতি ৯৫ টাকায় বিক্রি করে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা আয় করে। কেলেঙ্কারি ঢাকতে চকরিয়ার ডুলাহাজারা এলাকায় মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দের তথ্য প্রকাশ করা হয়। জব্দকৃত গাড়িটি থানায় না রেখে জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ড্রাইভার ইসমাইলের নামে এসআই সমীর গুহ একটি ভুয়া মামলা দায়ের করেন।
কক্সবাজারের রামু থানার ভূমিকা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে ইয়াবা পাচার কেলেঙ্কারির তদন্তে নিষ্ক্রিয়তা ও সম্ভাব্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতিরক্ষাকবচ তৈরির অভিযোগে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা তদন্তে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং স্থানীয় থানার কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও তথ্য গোপন করার চেষ্টার প্রমাণ মিলেছে বলে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।
"অদৃশ্য হাত"-এর অভিযোগ
বিশ্বস্ত পুলিশ সূত্রে প্রকাশ, গত জানুয়ারিতে রামুর কচ্ছপিয়া এলাকায় ডিবি’র অভিযানে ৪.৯ লক্ষ ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ হলেও, থানার তরফে কোনো প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল না করা হয়। বরং, ওই রেকর্ড স্থানীয় ডিবি অফিসে সরাসরি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) রহমত উল্লাহর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তদন্তকারী একটি সংস্থার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, "ইয়াবা পাচারের এই নেটওয়ার্কটি রামু থানার কিছু কর্মকর্তার সক্রিয় সমর্থনে কাজ করছিল, যা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাসের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সম্ভব নয়।"
### **উচ্চপর্যায়ের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ**
চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ ব্যবস্থাপনা) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী কক্সবাজারে তদন্ত তদারকি করছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, *"যুগান্তরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ছিল। এর ভিত্তিতে ইতিমধ্যে দুজন এসপিকে স্থগিত করা হয়েছে।"*
0 মন্তব্যসমূহ