কক্সবাজারে বিমান বাহিনী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে নিহত ১, নিখোঁজ ১ ও আহত বহু
//নিহত সিহাব, আইসিউতে শাহাদাত হোসেন চিকিৎসাধীন, আহত ১৪ ও নিখোঁজ ১ জন
//শোকে মুহ্যমান শিহাবের পরিবার: সন্তান হারালেন পিতা, বাবাকে হারালো তিন বছরের শিশু
কক্সবাজারে বিমান বাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়াপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম শিহাব কবির নাহিদ (৩০)। তিনি সমিতিপাড়ার বাসিন্দা এবং পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২৪ ফেব্রুয়ারী রাত ৮:৩০ টায় কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়, ২য় জানাযা রাত ১ টায় সমিতিপাড়ায় ও ৩য় জানাযা ২৫ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০ টায় নিজ গ্রামের বাড়ি রামুর মন্ডলপাড়ায় অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বিমান বাহিনীর কিছু সদস্য একজন আইনজীবীকে মারধর করলে ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয়রা বিক্ষোভ শুরু করলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
আলী হাসান মো: মুজাহিদ সহ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অ্যাডভোকেট জাহেদকে সোমবার সকাল ১০টার দিকে তার কর্মস্থল কোর্ট বিল্ডিং যাওয়ার পথে ডায়াবেটিস পয়েন্টের চেকপোস্টে আটক করে মারধর করা হয় এবং পরে বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয়রা সংঘবদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
সংঘর্ষে নাহিদ নামে একজন নিহত এবং ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় শাহাদাত হোসেন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নিহত শিহাবের পিতা নাছির উদ্দিন ও মাতা আমেনা বেগম জানান, তাদের ৫ সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে সন্তান শিহাব বিমানবাহিনীর গুলিতে মারা গেছে। সিহাবের ৩ বছরের বাচ্ছা আছে। এতে পিতা তার পুত্র হারিয়েছে আর ৩ বছরের অবুঝ বাচ্ছা তার বাবাকে হারিয়েছে।
বিমানবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিহত নাহিদ নিয়ে ডাক্তারের মূল বক্তব্য; যা বিভিন্ন মিডিয়া বিকৃত করে প্রচার করছে বলে অভিযোগ বলে উক্ত ডাক্তারের।
❝নিহত নাহিদের মাথার পিছনে থেঁতলে গেছে ও তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন কক্সাবাজারের সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সবুজ্ঞাগিন মাহমুদ সোহেল। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ বোঝা যাবে, বলছিলেন তিনি।
সন্ধ্যা ৫টায় কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সমিতিপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান, বিমানবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে তাদের ১৮/২০ জন সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, একজন আইসিইউতে, আরেকজনের অবস্থা এখনও আশঙ্কামুক্ত নয় এবং আরও একজন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানান তারা৷
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সেজান এহেসান দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, বিমান বাহিনী আইনের সুস্পষ্ট লংঘন করেছে। তাদের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অ্যাডভোকেট জাহিদকে তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে, যা বর্বরতার শামিল। বাহিনীর কাছ থেকে এমন জনবিরোধী আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। জনগণের বিরুদ্ধে এভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া তাদের উচিত হয়নি। বাহিনী জনগণের জন্য, জনগণ বাহিনীর জন্য নয়। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি সম্মান জানানো উচিত। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে বসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন দৈনিক পূর্বকোণকে জানান, এটি জেলা প্রশাসনের কোনো ইস্যু নয়। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আইএসপিআর বিবৃতি দিয়েছে। এছাড়া পরবর্তী কার্যক্রমগুলো জেলা প্রশাসন নিবিড়ভাবে দেখভাল করবে।
তবে, সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, দু'পক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।
এদিকে, কক্সবাজার জেলাজুড়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও সারাদিন জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা সমন্বয়ক মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলে সূত্রে জানা যায়।
উল্লেখ্য, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট হতে একজন স্থানীয় লোকের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমানবাহিনীর প্রভোস্ট কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সমিতিপাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিকেরও বেশি স্থানীয় লোকজন বিমানবাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমানবাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমানবাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমানবাহিনীর সদস্য ও সমিতিপাড়ার কিছু দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কিছু কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমানবাহিনীর সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে।এ সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন, যার মধ্যে বিমানবাহিনীর চারজন সদস্য (একজন অফিসার ও তিনজন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমানবাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।আইএসপিআর বলেছে, “রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমানবাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমানবাহিনীর ‘রুলস অব এনগেজমেন্ট’ অনুয়ায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। তবে স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোনো প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমানবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তারা আরও জানা যায়, যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
0 মন্তব্যসমূহ