কক্সবাজার অফিস ||
বিশ্বের দীর্ঘতম (১২০ কিলোমিটার) প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকতের জন্য খ্যাত কক্সবাজার দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের এই গন্তব্য ইনানী সৈকত, হিমছড়ি, মহেশখালী দ্বীপের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নীল জলরাশির জন্য পরিচিত। তবে সম্প্রতি টুরিস্ট পুলিশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যুগান্তকারী পদক্ষেপ এ অঞ্চলের ভাবমূর্তিকে নতুন করে প্রাণ দিয়েছে, যা পর্যটন সুরক্ষা ও অপরাধ দমনে একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
**কৌশলগত নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার**
চোরাকারবারি, হয়রানি ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় টুরিস্ট পুলিশ লাবনী থেকে কলাতলী সৈকত এবং শৈবাল পয়েন্ট থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত প্রধান অঞ্চলে নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি করেছে। উন্নত প্রযুক্তির সিসিটিভি মনিটরিং, মোটরসাইকেল টহল ও অশ্বারোহী ইউনিট এখন ২৪ ঘণ্টা সক্রিয় রয়েছে, যা জরুরি প্রতিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। সুগন্ধা পয়েন্টে স্থাপিত ইন্টারকম ও ইমার্জেন্সি বাটন সিস্টেমের মাধ্যমে পর্যটকরা সরাসরি কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করতে পারবেন—এ উদ্যোগ স্থানীয় ও বিদেশি ভ্রমণকারীদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।
**নেতৃত্ব ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ**
অতিরিক্ত ডিআইজি (সুপারনিউমারি) আপেল মাহমুদের নেতৃত্বে টুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তার বহুস্তরীয় কৌশল গ্রহণ করেছে। একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে মাহমুদ জানান, "সমগ্র সৈকতকে নিরাপত্তা জালে আবদ্ধ করাই আমাদের লক্ষ্য।" তার দল গোয়েন্দা নজরদারি, ড্রোন সার্ভেইল্যান্স ও সাদা ইউনিফর্মে নারী কর্মকর্তাদের মোতায়েন করেছে, যা পর্যটকদের জন্য আত্মবিশ্বাস ও স্বস্তি তৈরি করছে। মাদক পাচার রোধ, হারানো পাসপোর্ট উদ্ধার ও নিখোঁজ শিশুদের সন্ধানে এই বাহিনীর কার্যক্রম জাতীয় টুরিস্ট পুলিশ নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
**সাম্প্রতিক সাফল্য ও সমন্বয়**
২০২৪ সালের দুর্গাপূজা ও নববর্ষের সময় তীব্র টহল ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় অপরাধের হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। টুরিস্ট পুলিশের মুখপাত্র এএসপি আবুল কালাম বলেন, "সীমিত সম্পদ আমাদের প্রতিশ্রুতিতে বাধা নয়। পর্যটন সুরক্ষা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।" এসব প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি চোরাকারবারি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার ও চুরিকৃত জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়।
**পর্যটক ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা**
নিরাপত্তা ছাড়াও টুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে তথ্যকেন্দ্র, হটলাইন ও বহুভাষী গাইডের ব্যবস্থা করেছে। লাউডস্পিকারের মাধ্যমে বিপজ্জনক স্রোত ও প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে সতর্কতা প্রচার করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদেরও "নিরাপত্তা অংশীদার" হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, যা সন্দেহভাজন কার্যক্রম রিপোর্ট করতে উৎসাহিত করছে।
**ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা**
আসন্ন ঈদ মৌসুমকে সামনে রেখে টুরিস্ট পুলিশ রিয়েল-টাইম অ্যালার্টের জন্য মোবাইল অ্যাপ ও এআই প্রযুক্তি সংযোজনের পরিকল্পনা করছে। ব্রিটিশ পর্যটক এমা ক্লার্কের মতে, "চুরি হওয়া ফোন উদ্ধারে তাদের দ্রুত সহায়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাদের উপস্থিতি ভ্রমণকে উদ্বেগমুক্ত করে।"
অপরাধের হার হ্রাস ও পর্যটকদের আস্থা ফিরে পাওয়ার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক মানের গন্তব্য হিসেবে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করছে—যা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয়দের যৌথ প্রচেষ্টার এক অনন্য উদাহরণ।
0 মন্তব্যসমূহ