কক্সবাজারে জাল পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে ২ রোহিঙ্গা সুন্দরী আটক ; সিন্ডিকেট নিয়ে নাগরিক ভাবনা

 


//জনপ্রতিনিধি সহ প্রশাসনকে নিয়ে নাগরিক কমিটির নেতার ক্ষোভ

এরফান হোছাইন, কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আসা দুই নারীকে নকল কাগজপত্র দিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভার দক্ষিণ বাহারছড়া এলাকার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এ ঘটনা ঘটে।

আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি ) তাদের বিরুদ্ধে ধারা- ৪২০/৪৬৮/৪৭১/৩৪ পনোর কোড অনুযায়ী কক্সবাজার সদর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মোঃ জুনায়েদের মেয়ে রাবেয়া খাতুন প্রকাশ রাফিয়া (১৬) যার এফসিএন নং-১৬৬৪৫৩
আইয়ুব খানের মেয়ে মারজান বিবি প্রকাশ মায়রাম বিবি (২২) যার এফসিএন নং-১৬৬৪৯০।  তারা উভয়ই উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-০৪ এর ব্লক-সি'তে থাকেন।

জানা যায়,  আটককৃত উভয়ই নকল জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদ, কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃক জাতীয়তা সনদসহ বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন।

মামলার বাদী মোঃ আল মামুন (৩০) যিনি  আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কক্সবাজার সদর এ অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি জানান, পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা তাদের কাগজপত্র যাচাই করার সময় সন্দেহভাজন মনে করে পুলিশকে খবর দেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ দুজনকেই গ্রেপ্তার করে এবং তাদের কাছ থেকে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট আবেদন ফরম সহ বিভিন্ন কাগজপত্র উদ্ধার করে।
এছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে সোনালী ব্যাংকের চালান ফরম, মিসেস শারমিন খাতুন নামীয় পাসপোর্ট আবেদন ফরম, বিভিন্ন নকল জাতীয় পরিচয়পত্র, কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃক জারি করা নকল জাতীয়তা সনদ, কক্সবাজার পৌরসভার বিল, জমির খতিয়ান, ইউএনএইচসিআর কর্তৃক মায়ানমার নাগরিকদের দেওয়া স্মার্ট কার্ডসহ বিভিন্ন দলিল উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে যে, তারা একজন দালালের মাধ্যমে নকল কাগজপত্র তৈরি করে পাসপোর্ট করার চেষ্টা করছিল। পুলিশ এখন এই দালালকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

উল্লেখ্য যে, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ও এন আইডি তৈরি নতুন নয়, কক্সবাজারে বিভিন্ন দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের নিজস্ব দালাল চক্র রয়েছে। এর আগেও অনেক রোহিঙ্গা অবৈধ পাসপোর্ট করে বিদেশে গিয়েছে ও বর্তমানেও যাচ্ছে।
এ নিয়ে কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের নতুন পাসপোর্ট পেতে বা পাসপোর্ট নবায়ন করতে কত ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়, ভুক্তভোগীরাই তা ভালো জানেন।
অথচ রোহিঙ্গারা কেবল বাংলাদেশের এনআইডি কার্ড নয়, পাসপোর্টও সংগ্রহ করেছে তাও আবার অতিদ্রুত। খবরটি খুবই উদ্বেগজনক।
তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে অন্য কোনো দেশে গিয়ে যদি অপকর্ম করে ধরা পড়ে, তাহলে তাদেরকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবেই গণ্য করা হবে এবং সেদেশের আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। তখন বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট ও দেশের মানমর্যাদা কোথায় থাকবে?
মূলত দীর্ঘদিন ধরে অসাধু কিছু জনপ্রতিনিধি ও পাসপোর্ট, আর নির্বাচন অফিস কেন্দ্রীক একটা দালাল রয়েছে তাদের হাত ধরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের হাতে চলে যাচ্ছে এনআইডি পাসপোর্ট জন্মনিবন্ধন সনদসহ জনগুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবহেলা এবং অতীতে অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারার কারনে এই অপতৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না।

এই ঘটনা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলমান মানব পাচারের চক্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পুলিশের ধারণা, এই চক্রটি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের নামে নকল কাগজপত্র তৈরি করে পাসপোর্ট বানিয়ে দিচ্ছে এবং পরবর্তীতে তাদের বিদেশে পাচার করছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ