মিথ্যা মামলায় সাংবাদিকের পরিবার হয়রানির শিকার
//৭৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা মসজিদে নামাজে, অথচ মারামারির মামলায় হলেন আসামি
//পাওনা টাকা চাওয়ায় বাদীকে ‘ম্যানেজ’ করে উল্টো মামলার আসামি করা হলো পাওনাদারকে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়ার মাইজপাড়া জামে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হচ্ছিলেন ৭৬ বছর বয়সী হারুন তাহের। এমন সময় এক যুবক দৌড়ে এসে জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। চমকে উঠলেও তিনি কিছুটা স্থির থেকে বললেন, ‘‘এ বয়সে আমি কীভাবে লবণ মাঠ দখলের মতো ঘটনা ঘটাতে পারি? ঘটনার সময় আমি ১২ কিলোমিটার দূরে মসজিদের প্রাঙ্গণে ছিলাম। আমার ফোন লোকেশন ও কল লিস্ট সহ উক্ত ঘটনার ভিড়িও ছবি সহ যাচাই করলেই সত্যতা মিলবে।’’
১৮ জানুয়ারি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার করিদিয়া মৌজার লম্বা ঘোনার লবণ মাঠে সংঘটিত এক মারামারির ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় হারুন তাহের ও তাঁর বড় ছেলে মোস্তাফা কামালকে আসামি করা হয়েছে। একটি মামলার বাদী ওয়াজ উদ্দিন মাহমুদ এবং অন্যটির বাদী জসিম উদ্দিন সরকার। তবে ঘটনা ও মামলার মধ্যে বিরোধপূর্ণ তথ্য এবং কোনো তদন্ত ছাড়াই নির্দোষ ব্যক্তিদের জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
![]() |
হারুন তাহের (৭৬) |
একই ঘটনায় দুই মামলা, একই পরিবারকে লক্ষ্যবস্তুঃ
প্রথম মামলাটি পেকুয়া থানায় রুজু হয় ১৯ জানুয়ারি (মামলা নম্বর ১০)। আর দ্বিতীয় মামলাটি রুজু হয় ২০ জানুয়ারি (মামলা নম্বর ১১)। প্রথম মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছে ৮ জানুয়ারি দুপুর ২টায়। অন্যদিকে, দ্বিতীয় মামলার ঘটনাটি বলা হয়েছে ১৮ জানুয়ারি দুপুর ৩টায়। দুই মামলার ঘটনাস্থল ও বিবরণ আলাদা হলেও আসামি হিসেবে আলহাজ্ব হারুন তাহের ও তাঁর ছেলে মোস্তাফা কামাল আজাদের নাম রয়েছে।
মোস্তাফা কামাল জানান, মহেশখালীর বাসিন্দা আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ব্যবসায়িক কাজে ২ লাখ টাকা পান। আবুল হোসেন তাঁকে একটি চেক দিলেও সেটি ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর দেখা যায়, কোনো টাকা নেই। পাওনা আদায়ের জন্য তিনি আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠান। এরপর থেকেই আবুল হোসেন বিভিন্নভাবে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হয়রানি করতে থাকেন। পেকুয়ার দুটি মামলার বাদীদের সঙ্গে আবুল হোসেনের সুসম্পর্ক রয়েছে, যা প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাবের বিষয়টিকে স্পষ্ট করে।
![]() |
বৃদ্ধা হারুন তাহেরের পুত্র মোস্তাফা কামাল আজাদ |
‘আমরা মসজিদে ছিলাম, অথচ মামলার আসামি!’
স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘‘মামলায় উল্লেখ করা ঘটনার সময় আমরা মসজিদের আঙিনায় ছিলাম। অথচ কীভাবে একজন বৃদ্ধা ও তাঁর সন্তান ১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এমন ঘটনার আসামি হতে পারেন? এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও পরিকল্পিত।’’
আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়াঃ
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরামের জেলা সভাপতি সেজান এহেসান বলেন, ‘‘তদন্ত ছাড়া নিরীহ ব্যক্তিদের মামলায় জড়ানো মানে সেই মামলাটি হালকাভাবে নেওয়া। সঠিক তদন্ত ছাড়া মামলা দায়ের করা বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়।’’
এডভোকেট মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘‘তদন্ত ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করা বেআইনি। এটি শুধু সংবিধান লঙ্ঘন নয়, বরং অপরাধ।’’
পুলিশের অবস্থানঃ
পেকুয়া থানার ওসি সিরাজুল মোস্তাফা জানান, ‘‘মামলার এজাহার এলে অপরাধী বা নিরপরাধ তা যাচাই করার সময় থাকে না। তবে তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষ ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হবে।’’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ বলেন, ‘‘নিরীহ ব্যক্তিদের মামলায় জড়ানো অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি সংশ্লিষ্ট থানাকে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের নির্দেশ দিয়েছি।’’
স্থানীয়দের দাবি, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে হয়রানির শিকার পরিবারকে দ্রুত আইনি সহায়তা দিয়ে তাঁদের সম্মান ফিরিয়ে আনা হোক।
0 মন্তব্যসমূহ