বালি তোলা নিয়ে দ্বন্দ্ব, একদিনে রহস্যজনক আগুন; নিরাপত্তা ঝুঁকিতে মাতারবাড়ি বন্দর



বালি তোলা নিয়ে দ্বন্দ্ব, একদিনে রহস্যজনক আগুন; নিরাপত্তা ঝুঁকিতে মাতারবাড়ি বন্দর
----------------------------------------
মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দরে ঠিকাদারের ৪ স্কেভেটর সহ ৭ টি গাড়ি পুড়েছে রহস্যজনক আগুনে, ৫ কোটি টাকার ক্ষতি,পরস্পর বিরোধী বক্তব্য,

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজের বন্দর রক্ষা বাঁধের জন্য ব্লক তৈরী ও বালি ভর্তি জিও ব্যাগ দ্বারা ডাইক তৈরি কাজে নিয়োজিত সাব কন্টাক্টর কর্তৃক বালি তোলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে ঠিকাদারদের ৪টি এস্কেভেটর গাড়ি, ৩টি ট্রলি গাড়ি ও একটি ড্রেজার মেশিন সহ ৮টি গাড়িতে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্ত কর্তৃক রহস্যজনকভাবে আগুন অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ২২ জানুয়ারি দিবাগত রাতে অর্থাৎ গতকাল ২৩ জানুয়ারি ভোররাত ২ ঘটিকার দিকে মাতারবাড়ি বন্দর চ্যানেলের ধলঘাটার অংশে। এ ঘটনায় আনুমানিক ৫ কোটি টাকার  হয়েছে বলে দাবি করেন ঠিকাদারের লোকজন। তবে গভীর রাতে রহস্যজনক দেওয়া এই অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাব কন্ট্রাকে কাজ পাওয়া ঠিকাদারের সাথে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে পরস্পরের দ্বন্দ্ব ও পরস্পর বিরোধী বক্তব্য জানা গেছে। স্থানীয় ধলঘাটার ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান আতাহার ইকবাল দাদুল ও ইউপি মেম্বার জমির উদ্দিন এর সমন্বয়ে নেওয়া সাব ঠিকাদারি কাজে ধলঘাটার বেড়িবাঁধের পাশ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় গ্রামবাসী সমুদ্রের করাল গ্রাস থেকে তাদের বাড়িঘর রক্ষার্থে বাঁধা দেওয়ায় প্রতিবাদ কারীদের দমাতে সাবকন্ট্রাকে কাজ নেওয়া ঠিকাদারের লোকজন গাড়ি পরিয়ে এহেন ঘটনার অবতারণা করেছে মর্মে ঘটনাস্থলের পাশে ধলঘাটার মুহুরী ঘোনায় তাৎক্ষণিক আয়োজিত এক মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়। 



স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বালি তোলার কাজে জড়িত তাজ এন্টারপ্রাইজের সহকারী ঠিকাদার জমির উদ্দিনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি বালি তোলার কথা স্বীকার করেন। বালি তোলার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ কারো অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারো অনুমতি নেই।



        মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল সংলগ্ন বন্দর চ্যানেল রক্ষা বাঁধের ডাইক নির্মাণের কাজ পান তাজ এন্টার প্রাইজ ও জাহানারা ট্রেডিং কোং নামে ২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তাজ এন্টার প্রাইজ থেকে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ পান স্থানীয় আইটি এন্টারপ্রাইজ ও  জাহানারা ট্রেডিং কোম্পানী থেকে  সাব ঠিকাদার  হিসেবে কাজ পান শাকিল এন্টার প্রাইজ নামের আরও একটি সাব কন্টাকটারি প্রতিষ্ঠান।  স্থানীয় আইটি এন্টারপ্রাইজ কাজ পেয়ে ৩টি সেভেন পাওয়ার স্কেভেটর, ৪টি পাওয়ার টিলার ভাড়া করে ধলঘাটা চরে নিয়ে যায়। একই ভাবে স্থানীয় ঠিকাদার শাকিল এন্টারপ্রাইজ ও ১টি সেভেন পাওয়ার স্কেভেটর, জেনারেটর ও ড্রেজার মেশিন ভাড়া করে ধলঘাটা চরে নিয়ে যায়। ২ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান  মিলে গত ২২ জানুয়ারী বিকালে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করেন। তারা অবৈধভাবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বেড়িবাঁধের সংলগ্ন জায়গা থেকে শতশত জিও ব্যাগ নিয়ে বালি ভর্তি করার সময় স্থানীয়রা কাজে বাঁধা দেয়। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসেও অবৈধভাবে বালি উত্তোলন কাজে বাঁধা দেন। ফলে বালি ভরা শত শত জিও ব্যাগ ঠিকাদারের লোকজন রাতারাতি সরিয়ে নেয়।
কিন্তু রাত দেড়টায় কে বা কারা কাজে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ড ও গাড়ি চালকদের চোখে মুখে কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখে  হাতপা বেঁধে  স্কেভেটর,পাওয়ার টিলার ও বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সব কিছু আগুনে পুঁড়ে ছাই হয়ে যায় বলে ঠিকাদারের লোকজন অভিযোগ করেন। তারা বলেন স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত তাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।



    এদিকে ধলঘাটা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক নুরুল আলম পুতুর নেতৃত্বে উত্তর সুতরিয়া ও মহুরিঘোনা এলাকার লোকজন তাৎক্ষণিক ভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে তাঁরা দাবী করে বলেন, রাতের আঁধারে কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা ঠিকাদারের লোকজনই অবগত আছে। কিন্তু একটি প্রতিপক্ষ এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাঁকে এবং অবৈধভাবে বালি উত্তোলন কাজে বাঁধা দেওয়া উত্তর সুতরিয়ার নিরীহ লোকজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে আন্দোলনকারীদের দমানোর ষড়যন্ত্র স্বরূপ এই ঘটনার মিথ্যে অবতারণা করেছে। তাছাড়া এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চুকে ফাঁসাতে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সাব কন্ট্রাকে কাজ নেওয়া জমির উদ্দিন মেম্বারের অপপ্রয়াস বলে মানববন্ধনে দাবি করেন বিএনপি'র ইউনিয়ন সভাপতি নুরুল আলম পুতু।



      অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বিষয়ে ওয়াপদার উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী জামাল মোরশেদ জানান, বালি উত্তোলন এর বিষয়ে তদন্ত করে উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়টি জানানো হবে এবং কিসের ভিত্তিতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে বন্দরের কাজ করছে তা জেনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে দ্রুত।
      ঘটনার বিষয়ে মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের আইসি রাইটন দেব বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে পরিদর্শন করেছি। সার্বিক বিষয়ে ঘটনার পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দল, বালি উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ ঘটনার অবতারণা হয়েছে বলে মনে হয়। তবে কারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 

ছবি- ১। আগুনে পুড়ে যাওয়া এস্কেভেটর ও অন্যান্য গাড়ি। ২। এলাকাবাসীর মানববন্ধন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ