নিজস্ব প্রতিবেদক:
রুপা (ছদ্মনাম), একজন দুই সন্তানের বিধবা মা। প্রায় এক যুগ আগে স্বামীর মৃত্যুর পর সংগ্রামের জীবনে দুই সন্তানকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। বিয়ের অনেক প্রস্তাব পেলেও রুপা রাজি হননি। কিন্তু মাস ছয়েক আগে কক্সবাজার বিচ কার্নিভালে রুপার জীবনে আসে ভয়াবহ মোড়।নারী শিকারী আজিজ রুপাকে প্রলুব্ধ করে তার ফাঁদে আটকে ফেলে।
মেয়ে পটানোতে পারদর্শী আজিজ রুপার সাথে যোগাযোগ শুরু করে এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয়। গ্রামের সহজ-সরল রুপাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আজিজ তাকে শহরে নিয়ে আসে।কিন্তু বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি না হওয়ায় আজিজ কৌশলে মৌখিক বিয়ে করে রুপার উপর নির্যাতন চালায়। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন হোটেল ও রুমালিয়ার ছড়া তার বড় ভাইয়ের বাসায় রুপাকে আটক রেখে বারবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।এই সময় ধূর্ত আজিজ গোপনে রুপার সাথে কাটানো একান্ত সময়ের ভিডিও ধারণ করে।
রুপা যখন আজিজকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকে, তখন তার আসল চরিত্র বেরিয়ে আসে। আজিজ তাকে হুমকি দেয় যে সে তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ফাঁস করে দেবে। সে রুপাকে প্রতি সপ্তাহে দুইবার হোটেলে যেতে বাধ্য করে। অসহায় হয়ে রুপা আইনের আশ্রয় নেয় এবং আজিজের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে যে, কক্সবাজার সদর থানাধীন কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সমিতি পাড়া এলাকার নজির আহমেদের পুত্র আজিজ উদ্দিন একজন নারী লোভী, চরিত্রহীন ও লম্পট। সে বিভিন্ন কায়দা-কৌশলে নারীকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করে।মামলার বাদী রুপা (পরিবর্তিত নাম) জানান, প্রায় ৫/৬ মাস পূর্বে তিনি কক্সবাজার শহরে বেড়াতে আসেন। তখন তিনি লাবনী বিচ পয়েন্ট এলাকায় আজিজ উদ্দিন (২৫) নামে ওই যুবকের সাথে পরিচয় করেন। পরিচয়ের পর থেকে আজিজ রুপার পিছু নিতে থাকেন। সে নিয়মিত রুপার মোবাইলে ফোন দিতেন এবং তার সাথে দেখা করার জন্য চাপ দিতেন।
আজিজ তার স্ত্রী অসুস্থ ও অক্ষম দাবী করে রুপাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করেন। এক পর্যায়ে গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮ টায় তাকে বিয়ে করার কথা বলে আজিজের বসতঘরে নিয়ে যায়। পরদিন বিয়ে করবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আজিজ তাকে ওই রাতেই একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
১৪ অক্টোবর পরদিন রুপা বিয়ের জন্য কাজী অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলে আজিজ তাকে আজ নয়, পরে বিয়ে করবেন জানিয়ে সকাল ১০ টার দিকে রুপাকে গ্রামের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন। এদিকে রুপা পরবর্তীতে আজিজকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে আজিজ রুপাকে তাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের আপত্তিকর ছবি, ভিডিও ধারণ করা আছে বলে জানান। বিয়ের জন্য চাপাচাপি করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গোপন ভিডিও প্রকাশ্যে আনার হুমকি দেন।এরপর থেকে ধারাবাহিক ভাবে রুপাকে জিম্মি করে মাসের পর মাস শহরের বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতে থাকেন। শুধু ধর্ষণকান্ডে সীমাবদ্ধ থাকেননি আজিজ। তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিপুল অংকের টাকাও হাতিয়ে নেন। কয়েকদফায় আজিজ তার কাছ থেকে নগদ ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে ননিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন রুপা।এদিকে আজিজের সমিতি পাড়া এলাকায় তার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয়দের অনেকে তাকে নারী শিকারী আজিজ বলে ডাকেন। তার কারনে একাধিক নারীর সংসার ভাঙা, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
অভিযোগ আছে, কৌশলে মেয়েদের পটিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে যৌন লালসা মিটানো ও টাকা হাতিয়ে নেওয়া তার পেশা ও নেশা। তার খপ্পরে পড়ে অনেক মেয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন। ভুক্তভোগী অনেক নারী বিভিন্ন সময় অভিযোগ নিয়ে থানায় দারস্থ হলেও মামলা পর্যন্ত গড়ায়নি। থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলেই শুরু হয় নানামুখী তদবির। বহুরূপী আজিজের বিচরণ সর্বত্র। তার ফেসবুক পেইজে ডুকে দেখা গেছে, সে একাধারে উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, নাট্যকর্মী, থিয়েটার কর্মীসহ নানান পরিচয়ে পরিচিত।ফেসবুক ওয়ালে শোভা পাচ্ছে শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতানেত্রীদের সাথে ছবি। সে এসব পরিচয় ও নেতানেত্রীদের ছবিকে পুঁজি করে দিনদিন বিস্তৃত করেছে তার অপকর্মের ফিরিস্তি। জানা যায় কক্সবাজার পৌরসভা ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক।
আজিজের হাতে প্রতারণার শিকার শহরের পাহাড়তলী এলাকার এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আজিজ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সর্বনাশ করেছে। বিচার চেয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি। কেউ আমার করা শোনেনি। উল্টো আমাকে খারাপ মেয়ের তকমা দিয়েছে। শেষমেশ তার অব্যাহত হুমকির মুখে সব অন্যায় হজম করতে বাদ্য হয়ছি। এক প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, অবশ্যই সেল্টার পেলে আজিজের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করবেন তিনি।তার হাতে যৌন লালসার শিকার আরেক নারী সর্বশান্ত হয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করছেন। ওই নারী নাম প্রকাশ না করে জানান, আজিজ যে মোটরবাইক চালায় সেটিও আমার টাকায় কেনা। লম্পট আজিজ রঙ্গিন স্বপ্ন দেখিয়ে শুধু আমাকে ভোগ করেনি, আমার টাকা পয়সা সব হাতিয়ে নিয়েছে। পরে ক্ষোভে অপমানে তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে গৃহকর্মীর কাজ করছেন বলে জানান।
কক্সবাজারের একজন উদ্যোক্তা নারীও একই ধরনের লালসা ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত আজিজের হাত থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী একাধিক নারী জানান, আজিজ উদ্যোগক্তা ও সাংবাদিক পরচিয় দিয়ে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে প্রথমে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। পরে কৌশলে শারীরীক সম্পর্ক গড়ে তুলেন। এসময় কৌশলে ভিডিও ধারণ করে করেন। পরে ব্ল্যাকমেইল করে ফাঁদে ফেলা নারীদেরনিয়মিত একান্ত সময় কাটাতে বাধ্য করেন ভংয়কর নারী শিকারী আজিজ উদ্দিন।এভাবে বিভিন্ন কায়দা কৌশলে আজিজ প্রায় অর্ধশতাধিকের বেশি নারীর সর্বনাশ করেছেন বলে এলাকায় প্রচার আছে। কৌশলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রথমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও গোপনে ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা আদায় করায যেন তার পেশা। এসব টাকা দিয়ে শহরের নাজিরারটেক নামক এলাকায় বালিচড় শুঁটকি বিতান নামের একটি শুঁটকি মহাল গড়েছেন তিনি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত আজিজ থেকে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে সব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন। আজিজ বলেন আমাকে সামাজিকভাবে ছোট করার জন্য নারীঘটিত অভিযোগ তুলা হচ্ছে।
কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ রকিবুজ্জামান জানান, আজিজ উদ্দিন নামে একজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা রেকর্ড হয়েছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
0 মন্তব্যসমূহ