আর বিএন ডেস্কঃ
শেখ পারভেজের বল উড়িয়ে মারলেন অমিদ রেহমান। আকাশে উঠে যাওয়া বল ধরতে একসঙ্গে দৌড়ে এলেন লং অফ, লং অনের ফিল্ডার। সফল হলেন লং অনে থাকা মোহাম্মদ শিহাব। তার হাতে বল জমা পড়তেই উল্লাসে মাতলেন ক্রিকেটাররা, ডাগ আউট থেকে পতাকা নিয়ে দৌড়ে এলেন বাকিরা। প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতল বাংলাদেশ।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দশম আসরের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানে হারাল বাংলাদেশের যুবারা। রোববার ২৮৩ রানের লক্ষ্যে ২৪.৫ ওভারে স্রেফ ৮৭ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিক দল।
২০১৯ সালের আসরে রানার্স-আপ হওয়া ছিল বাংলাদেশের এত দিনের সেরা সাফল্য।
টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেন আশিকুর রহমান। পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন ছন্দে থাকা চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আরিফুল ইসলাম। পরে সম্মিলিত বোলিং দাপটে অনায়াস জয় পায় বাংলাদেশ।
আগের চার ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও দুটি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলা আশিকুর নিজের সেরাটা যেন জমিয়ে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্যই। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তিনি করলেন ১২৯ রান। ১২ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ১৪৯ বলের ইনিংসে এই কিপার-ব্যাটসম্যানের হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
দুটি করে ফিফটি-সেঞ্চুরিতে ১২৬ গড়ে আসরের সর্বোচ্চ ৩৭৮ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছেন আশিকুর।
ছুটির দিনে দর্শকভরা মাঠে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় আরব আমিরাত। সকালের কন্ডিশন ও উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে শুরুতে বাংলাদেশকে কিছুটা চেপে ধরে তারা। পঞ্চম ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরেন জিসান আলম। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে আসে স্রেফ ২৭ রান।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ধীরে ধীরে দলকে এগিয়ে নেন আশিকুর ও রিজওয়ান। চতুর্দশ ওভারে দলের পঞ্চাশ পূর্ণ হওয়ার পর ১০ ওভারের কমে একশতে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে ৫৫ বলে ফিফটি করেন রিজওয়ান। আশিকুরের পঞ্চাশ ছুঁতে লাগে ৭৮ বল। ৩১তম ওভারে ধ্রুব পারাশারের বলে ক্যাচ দেন ৬০ রান করা রিজওয়ান। তার বিদায়ে ভাঙে ১২৫ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
চার নম্বরে নেমে রানের গতি বাড়ান আগের ম্যাচে ৯৪ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলা আরিফুল। কার্যকর রিভার্স সুইপ, সুইপ, স্কুপের পসরা সাজিয়ে স্রেফ ৩৯ বলে পূর্ণ করেন পঞ্চাশ।
এরপর অবশ্য আর এগোতে পারেননি তিনি। দলকে দুইশ পার করিয়ে আয়মান আহমেদের বলে স্কুপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন আরিফুল। তার বিদায়ে ভাঙে আশিকুরের সঙ্গে ৭৬ বলে ৮৬ রানের জুটি।
আরিফুল ফেরার আগেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আশিকুর। ১২৯ বলে ১০ চারে তিন অঙ্কে পৌঁছান এই ওপেনার। পরের ২০ বলে তিনি করেন আরও ২৯ রান। এসময় দুই চারের সঙ্গে মারেন নিজের একমাত্র ছক্কা।
শেষ দিকে ১১ বলে ২১ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান। বাংলাদেশ পৌঁছে যায় টুর্নামেন্টে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোরে।
আরব আমিরাতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন আয়মান।
স্বাগতিকদের রান তাড়ায় পঞ্চম ওভারে আরিয়ানশ শার্মাকে ফেরান মারুফ মৃধা। এক ওভার পর আরেক ওপেনার আকশাত রাইকেও বিদায় করেন বাঁহাতি পেসার।
পাওয়ার প্লেতে উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন রোহানাত দৌল্লাহও। তিনিও ধরেন দুই শিকার। প্রথম ১০ ওভারে ৩৯ রান করতে ৪ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে একরকম ছিটকে পড়ে আরব আমিরাত।
পঞ্চাশের আগে আরেকটি উইকেট নেন রোহানাত। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে স্বাগতিকদের বিপদ আরও বাড়ান ইকবাল। পঞ্চদশ ওভারে পরপর দুই বলে তিনি আউট করেন ইয়ায়িন রাই ও আম্মার বাদামিকে। স্রেফ ৬১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বড় হারের শঙ্কায় পড়ে যায় আরব আমিরাত।
সেখান থেকে আর বের হতে পারেনি তারা। একপ্রান্ত ধরে রেখে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন চার নম্বরে নামা ধ্রুব।
বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন মারুফ ও রোহানাত। ইকবাল ও পারভেজ ধরেন ২টি করে শিকার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৫০ ওভারে ২৮২/৮ (আশিকুর ১২৯, জিসান ৭, রিজওয়ান ৬০, আরিফুল ৫০, আহরার ৫, শিহাব ৩, মাহফুজুর ২১, পারভেজ ১*, রোহানাত ০; অমিদ ১০-১-৪১-১, আয়মান ১০-০-৫২-৪, আয়ান ৮-০-৪৪-০, হার্দিক ৮-০-৫০-১, বাদামি ১-০-৯-০, ধ্রুব ৬-০-৩০-১, আকশাত ৩-০-২৫-০, ইয়ায়িন ৪-০-৩০-০)
সংযুক্ত আরব আমিরাত অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ২৪.৪ ওভারে ৮৭ (আরিয়ানশ ৯, আকশাত ১১, তানিশ ৬, ধ্রুব ২৫*, ইথান ৪, আয়ান ৫, ইয়ায়িন ৬, বাদামি ৯, হার্দিক ৪, আয়মান ০, অমিদ ৩; মারুফ ৭-০-২৯-৩, ইকবাল ৬-০-১৫-২, রোহানাত ৬-২-২৬-৩, পারভেজ ৪.৫-১-৭-২, মাহফুজুর ১-০-৬-০)
ফল: বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ১৯৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আশিকুর রহমান
ম্যান অব দা সিরিজ: আশিকুর রহমান
সুত্রঃ বিডিনিউজ
0 মন্তব্যসমূহ