চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সিট খালি থাকলেও স্বপ্ন ভঙ্গ তাদের

 


চবি নিউজ ডেস্ক:

ছোট বেলা থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতেন কক্সবাজারের সন্তান আইয়ুব খান। প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধে সফল না হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ চালু হলে আশার আলো বাঁধে তার বুকে। চবির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সন্তোষজনক মেরিটে পাসও করেন আইয়ুব। স্বপ্ন ছিল বাংলা বিভাগে পড়াশোনা করবেন। কিন্তু আবারও সেই আশায় গুড়েবালি।


২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ষষ্ঠ মেধাতালিকার ভর্তি শেষ হওয়ার পর তিনশোর অধিক সিট খালি রয়েছে। তবে ৭ম মেধাতালিকা প্রকাশ করছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।


আইয়ুবের মতো স্বপ্ন ভঙ্গ হতে যাচ্ছে নানজিবা নাওয়ার সুজানারও। ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদভুক্ত এ ইউনিটে তার সিরিয়াল ২৬৭৭। সর্বশেষ মেধাতালিকা গিয়েছে ২৬৭৪ পর্যন্ত । চবিতে ভর্তি হওয়ার আশায় রুয়েটে ডাক পেয়েও যাননি চট্টগ্রামের এই মেয়ে। চট্টগ্রাম কলেজে ইংরেজি সাবজেক্টও পেয়েছিলেন। কিন্তু চবিতে ডাক পড়লে তখন ভর্তি বাতিল বিড়ম্বনার চিন্তায় চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হননি। 


একুল অকুল সব হারিয়ে এখন অনিশ্চিতায় দিন কাটছে সুজানার। তাকিয়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দয়ার দিকে। ষষ্ঠ মেধাতালিকা প্রকাশিত হয় ২১ সেপ্টেম্বর। এরপর দুই মাস অতিবাহিত হলেও ৭ম মেরিট প্রকাশিত হয়নি।


আইয়ুব সুজানার মতো চবি কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে আছেন শত শত শিক্ষার্থী। তাদের দাবি - সিট খালি রেখে প্রশাসনের কী লাভ? আমরা তাদের সন্তানতুল্য। যদি আরেকটা মেরিট প্রকাশ করেন তাহলে শত শত শিক্ষার্থীর প্রাণে আলোর সঞ্চার হবে।


দাবি আদায়ে চবি উপাচার্য কার্যালয়, প্রক্টর অফিস ও ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিবের দপ্তরেও দেখাও করেন বিভিন্ন ইউনিটের মেধাতালিকায় অপেক্ষমান শিক্ষার্থীদের একাংশ। প্রক্টর ও উপাচার্য বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছেন তারা। তবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস না পেয়ে হতাশ তারা।


বি ইউনিটের মেধাতালিকায় অপেক্ষমান রাকিবুল হাসান বলেন, আমরা প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেননি। সিট খালি রেখে উনাদের কোনো ফায়দা হবে? অথচ এতো গুলো সিট খালি রয়েছে। সেগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর জন্য উনারা আরও বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা ছিল। আমরা কত কঠিন পরিস্থিতি দিয়ে যাচ্ছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। 


এ ইউনিটে মেধাতালিকায় অপেক্ষমান নানজিবা নাওয়ার সুজানা বলেন, আমি ও আমার পরিবার কী ট্রমার মধ্যে যাচ্ছি তা বলে বুঝাতে পারবো না। চবি প্রশাসনের যদি আমাদের প্রতি একটু দয়া হয় আর কি। প্রতিটা দিন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অপেক্ষায় পার করছি। আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা আমাদের প্রতি একটু সদয় হোন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম বলেন, মেধা তালিকা প্রকাশ করার বিষয়টি ভর্তি পরীক্ষা কমিটির এখতিয়ারাধীন বিষয়। এ বিষয়ে আইসিটি সেলের কোনো ভূমিকা নেই। যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে ভর্তি কমিটি এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।


সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলাহ বলেন, সিট খালি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো লাভ নেই। নতুন মেরিট দিলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। ভর্তি কো-অর্ডিনেটর কমিটির মিটিং হলে আমি সেখানে এই বিষয়টি উত্থাপন করবো।


আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, আমরা এটার চিন্তা ভাবনা করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই নতুন মেরিট দেওয়া হোক। পরীক্ষা কমিটির মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।


পরীক্ষা কমিটির সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার এস এম আকবর হোছাইন বলেন, 'নতুন মেরিট প্রকাশিত হবে কিনা সেটি এখন বলতে পারছি না। ভর্তি পরীক্ষা কমিটির পরবর্তী মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' মিটিং কখন হবে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। 


বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট খালি না রাখার কথাই বলছেন চবি শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, সবাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়। এতগুলো সিট খালি রাখার মধ্যে কোনো ক্রেডিট নেই। আমার মনে হয় পরবর্তী মেধা তালিকা প্রকাশ করলে ভালো হয় যেহেতু ছাত্র-ছাত্রীরা পড়তে চায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ